পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে অথবা পাসপোর্ট করার জন্য কি কি জরুরি কাগজপত্র প্রয়োজন হতে এ বিষয়ে আমাদের সবার অবগত হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে আমরা যখন পাসপোর্ট করার জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করি। তখন বিভিন্ন ধরণের কাগজপত্র, ছবি, ব্যাংকিং হিসাব ইত্যাদির কারণে অনেকসময় আমরা হ্যারেজ হয়ে থাকি। তাই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার আগে পাসপোর্ট করতে কি লাগে এই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই জানা দরকার। কেননা আপনি যদি সঠিকভাবে না জানেন যে পাসপোর্ট করতে কি লাগে তাহলে আপনাকে অতিরিক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন ভাবে হয়রানি হতে পারেন।
আমাদের আজকের এই ব্লগের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ একটি আলোচনা করতে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন
- পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
- ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
- অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে পারপোর্ট করতে কি কি লাগে?
- পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্ট এর জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায়। একটি হলো যে ম্যানুয়াল সিস্টেমে অন্যটি হলো ই-পাসপোর্ট সেবা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনারা ম্যানুয়াল সিস্টেমে অর্থাৎ পুরাতন সিস্টেমে পাসপোর্ট আবেদন করা যায় এবং কি কি প্রয়োজন পরে পাসপোর্ট তৈরির জন্য।
১। পাসপোর্ট আবেদন ফরম বা ডি.আই.পি ফরম-১ ডাউনলোড করে নিয়ে দুই কপি প্রিন্ট করে নিতে হবে। এরপর সঠিক তথ্য দিয়ে ফরম দুইটি পূরণ করতে হবে।
২। ফরমের ৪র্থ পৃষ্ঠায় একজন সহকারী কর্মকর্তা কতৃক সত্যায়িত করে নিতে হবে।
৩। পূরণকৃত ফরমে আবেদনকারীর সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে।
নোটঃ মনে রাখতে হবে যে, আবেদনকারীর বয়ষ যদি ১৫ বছরের কম হয়। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর বাবা ও মায়ের স্ট্যাম্প সাইজের দুই কপি করে রঙিন ছবিও আঠা দিয়ে লাগাতে হবে। তারপর সত্যায়িত করতে হবে।
৪। জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদ পত্রের দুই কপি সত্যায়িত করে নিতে হবে।
৫। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, গাড়ি চালক অথবা অন্য কারিগরি পেশায় নিয়জিত থাকলে পেশাগত সনদের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করতে হবে।
৬। অফিসিয়াল ভাবে পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য সরকারী আদেশ অনুযায়ী গভ.অর্ডার বা জিও সঙ্গযুক্ত করে নিতে হবে।
নোটঃ অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাগনদের ক্ষেত্রে পেনশন বইয়ের ফটোকপি সঙ্গযুক্ত করলে সাধারণ ফিতে জরুরি সেবা পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: ই পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায় ২০২২
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট নবায়ন বা রিনিউ করার নিয়ম ২০২২
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করা থেকে সুরু করে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া অব্ধি আমাদের কে নানান রকম ঝামেলা পোহাতে হয় একই সাথে নানান রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এই সমস্যা গুলোকে কিছুটা লাঘব করেছে ই-পাসপোর্ট সেবা।
ই-পাসপোর্ট আবেদন সেবার কিছু ভালো দিক রয়েছে। ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজন হয়না কোনো রকমের কাগজ, ছবির সত্যায়িত কপি। একইসাথে অনলাইনে ঘরে বসেই করা যায় ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন। চলুন জেনে নেওয়া ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে।
১। জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদ।
২। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে চাইলে অনলাইন জন্ম সনদের পাশাপাশি বাবা ও মায়ের ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার প্রয়োজন হবে।
৩। কারিগরি পেশায় নিয়জিত থাকলে সনদ পত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।
৪। শিক্ষার্থী হলে শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড অথবা প্রত্যয়ন পত্রের মূল কপি এবং পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার সময় ফটোকপি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৫। ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদনের পর আঞ্চলিক অফিসে যাওয়ার সময় অনলাইন আবেদনের প্রিন্ট (উভয়পাশে) সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৬। ব্যাংকে জমাকৃত ই পাসপোর্ট ফি এর রশিদ সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৭। বর্তমান এবং স্থানীয় ঠিকানা আলাদা হলে স্থায়ী ঠিকানার সনদপত্র সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৮। প্রযজ্য ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ অথবা নিকাহনামা অ বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে একই সাথে পূর্ববর্তী অথবা ভোটার আইডি কার্ডে অবিবাহিত থাকলে স্বামী বা স্ত্রী এর ভোটার আইডি কার্ড এর কপি আপলোড করতে হবে।
৯। পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার জন্য পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি জমা করতে হবে এবং মূল পাসপোর্ট আঞ্চলিক অফিসে নিয়ে যেতে হবে।
নোটঃ সরকারী কর্মচারিদের GO, NOC বা প্রত্যয়নপত্র, অথবা পেনশন বই থাকলে আপলোড করতে পারেন। এতে নিয়মিত ডেলিভারি পাসপোর্ট ফি জমা দিয়েও জরুরী সেবা তথা এক্সপ্রেস ডেলিভারি পাওয়া যাবে।
ব্যাংক রশিদ, অনলাইন আবেদন পত্রের প্রিন্ট কপি, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, অথবা জন্ম সনদপত্র এর ফটোকপি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকলে বাবা ও মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটকপি বাংলাদেশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট আবেদনকারীর বয়সের ভিত্তিতে বিভিন্ন তথ্য প্রয়োজন হতে পারে।
পাসপোর্ট আবেদনকারী ৬ বছরের কম হলে
১। ৩ আর (3R Size) সাইজের ল্যাব প্রিন্ট গ্রে কালার ব্যকগ্রাউন্ড ছবি প্রয়োজন হবে।
২। বাবা ও মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর অবশ্যই উল্ল্যেখ করতে হবে।
৩। BRC English ভার্সন অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
পাসপোর্ট আবেদনকারী ১৮ বছরের কম হলে
১। বাবা ও মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর অবশ্যই উল্ল্যেখ করতে হবে।
২। BRC English ভার্সন অনলাইন নিবন্ধন সনদ।
পাসপোর্ট আবেদনকারী ১৮ থেকে ২০ বছর হলে
১। জাতীয় পরিচয়পত্র এর ফটোকপি এবং মূলকপি অথবা
২। BRC English ভার্সন অনলাইন জন্ম সনদ।
নোটঃ পাসপোর্ট আবেদনকারী ২০বছরের বেশি হলে ভোটার আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক। তবে, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে BRC English ভার্সন অনলাইন জন্ম সনদ দিয়েও আবেদন করা যাবে।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
বিভিন্ন মেয়াদের ভিত্তিতে এবং রেগুলার, জরুরি ও অতিব জরুরী ডেলিভারির ভিত্তিতে পাসপোর্ট এর জন্য বিভিন্ন রকম ফি প্রদান করতে হয়। নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
রেগুলারঃ ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৪০২৫ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৬৩২৫ টাকা।
এক্সপ্রেস/ জরুরীঃ ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৬,৩২৫ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৮,৬২৫ টাকা।
অতীব জরূরীঃ ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৮,৬২৫ টাকা এবং ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ১২,০৭৫ টাকা।
আরও পড়ুন: তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন নেয়ার সঠিক উপায়
আরও পড়ুন: বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান
আরও পড়ুন: ১৫ হাজার টাকার মধ্যে সেরা মোবাইল
১০ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট ফি
রেগুলারঃ ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৫,৭৫০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৮,০৫০ টাকা।
এক্সপ্রেস/ জরুরীঃ ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ৮,০৫০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ১০,৩৫০ টাকা।
অতীব জরুরীঃ ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ১০,৩৫০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতা ই পাসপোর্ট ফি ১৩,৮০০ টাকা।
আমাদের শেষকথা
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্ঠা করেছি। আশা করি এই ব্লগের মাধ্যমে আপনারা সম্পূর্ণ ভাবে জানতে পেরেছেন যে, পাসপোর্ট করার জন্য কি কি প্রয়জনীয় কাগজপত্র এবং মেয়াদ ভিত্তিক পাসপোর্ট এর ফি সম্পর্কে।
আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত টেকনোলজি, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য টিপস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কম্পিউটার, মোবাইল, টিপস ও ট্রিক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে যাচ্ছি এবং আমাদের এ ধারা অব্যহত থাকবে। আমাদের এই ব্লগটি ঘুরে দেখার আমন্ত্রন রইলো।