ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো কি কি

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো কি কি আমরা অনেকেই জানি না। বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস একটি বিপাক-জনিত রোগ। সঠিক প্রতিকার না পাওয়ার ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে ডায়াবেটিস এর প্রভাব। মানব দেহের ইনসুলিন নামক হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণেই বিপাক-জনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় সেগুলো প্রসাবের সাথে বের হয়ে আসে। আর এভাবেই ডায়াবেটিস রোগ হয়ে থাকে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো কি কি? ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ, ডায়াবেটিস এর ধরণ এবং ডায়াবেটিস এর প্রতিকার বা প্রতিরোধ সম্পর্কে।

ডায়াবেটিস কেনো হয়

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো কি কি

আগে ধারণা করা হতো যে, শুধুমাত্র বয়স্ক ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয়। কিন্তু বর্তমানে সে ধারণার পরিবর্তন এসেছে। এখন যে কোনো বয়সের মানুষের ডায়াবেটিস নামক বিপাক-জনিত রোগ হতে পারে। তবে কিছু মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস অনেক বেশি লক্ষণীয়। ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ হলো, আমাদের দেহে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন রয়েছে। কারো শরীরে যখন এই হরমোনের ঘাটতি থাকে তখন বিপাক-জনিত জটিলতার সৃষ্টি হয়। আর এর ফলে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় যা প্রসাবের সাথে নির্গত হয়। আর আমরা এই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলে থাকি। চলুন এবার আমরা জেনে নেই যে, কারা কারা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

● যারা শারীরিক ব্যায়াম করেন না বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না তারা ডায়াবেটিস এর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
● যাদের কিনা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং রক্তের মাঝে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে নেই তারাও এই রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
● গর্ভাবস্থায় থাকা নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না আসলে তাদের ও স্থায়ীভাবে ডায়াবেটিস হতে পারে।
● অতিরিক্ত ওজন আছে তারা এই রোগের ঝুঁকিতে আছেন।
● যারা দীর্ঘদিন ধরে কটিসোল জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করেন তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডায়াবেটিস এর ধরণ

ডায়াবেটিস বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। গবেষকরা মানুষের বয়স, শারীরিক অবস্থা, জীবন যাপনের অবস্থার উপর ভিত্তি করে কয়েক ধরণের ডায়াবেটিস শনাক্ত করেছেন। চলুন এবার আমরা জেনে নেই ডায়াবেটিস এর ধরণ সম্পর্কে।

টাইপ-১
গবেষকরা জানিয়েছেন যে, সাধারনত ৩০ বছর বয়সের মানুষদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস ধরা পরে। যাদের এ টাইপের ডায়াবেটিস হয় বা এ ধরনের ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয় সাধারণত তাদের শরীরে কোনো রকমের ইনসুলিন তৈরি হয় না বা তাদের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ খুবই নগণ্য। এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদাভাবে ইনসুলিন নিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের মাত্রার উপর ভিত্তি করে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। সময়মত ইনসুলিন না দেওয়া হলে রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকে যার ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই রক্ত অম্লজাত বিক্রিয়া শুরু করে। আর এর ফলে রোগী অজ্ঞান ও হয়ে যায়। এমন কি রোগীর মৃত্যু ও হতে পারে।

টাইপ -২
সাধারনত ৩০ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ধরা পরে। এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয় না। তবে ইনসুলিনের মাত্রা একেবারেই কম থাকে যার ফলে টাইপ ১ এর মতো লাদা ভাবে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ইনসুলিন না গ্রহণ করার ফলে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সাধারনত এ ধরনের রোগীরা পুরোপুরি ইনসুলিন এর উপর নির্ভরশীল নয়। এরা চাইলে হাঁটাচলা এবং খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস

এক রিপোর্ট এ দেখা গিয়েছে যে, এখন গর্ভকালীন সময়েও নারীদের ডায়াবেটিস ধরা পরে। অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তান প্রসবের পর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। কিন্তু, গর্ভাবস্থায় মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শিশু ও মায়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে অনেক নারীদের কে ইনসুলিন গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। চলুন এবার ডায়াবেটিস কেন হয় সে সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।

● বংশগত ইনসুলিন হরমোন কম উৎপাদন হওয়ার কারণে।
● বংশগত কারণে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে।
● অন্যান্য হরমোনের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়া।
● অম্লাশয়ের জটিলতা থাকার কারণে।
● ঔষধ অথবা রাসায়নিক দ্রব্যের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফলে।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো কি কি

ডায়াবেটিসের অনেক লক্ষণ রয়েছে। চলুন এবার একে একে জেনে নেই ডায়াবেটিস হওয়ার লক্ষণ গুলো সম্পর্কে।

ঘন ঘন প্রসাব
ডায়াবেটিস একটি বহুমূত্র রোগ। যার কারণে এর প্রধান লক্ষণ হলো ঘন ঘন প্রসাব হওয়া। এছাড়াও প্রসাবের বেগ পাওয়া কিন্তু প্রসাব না হওয়াও ডায়াবেটিসের লক্ষণ।

অতিরিক্ত বা বারবার ক্ষুধা লাগা
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের লক্ষণ গুলোর মধ্যে বার বা ক্ষুধা লাগাও একটি লক্ষণ। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগী যথেষ্ট পরিমাণে খাওয়ার পরেও তাদের বারবার ক্ষুধা লাগে এবং খাবার চাহিদা পূরণ না হওয়া একটি অন্যতম লক্ষণ।

অতিরিক্ত পিপাসা লাগা

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ গুলোর দিকে খেয়াল করে দেখা গিয়েছে যে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পরও পিপাসা মেটে না। আর এ কারণে অতিরিক্ত পানি পান করার ফলে প্রসাবের বেগ ঘন ঘন তৈরি হয়। যা কিনা বহুমূত্র হওয়ার একটি কারণ।

ওজন হ্রাস পাওয়া
ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর হটাৎ করেই ওজন হ্রাস পায়। অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার পরও ওজন না বারার পরিবর্তে ওজন হ্রাস পায় বা কমতে থাকে।

ক্ষত স্থান দেরিতে নিরাময় হওয়া
যে কোনো ধরনের ক্ষত স্থান দেরিতে নিরাময় হওয়া ডায়াবেটিস এর লক্ষণ। এটি অনেক বর একটি আতংক, কেননা অপারেশন এর সময় এ ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া ও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া
দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ। ৩০ বছরের আগে ডায়াবেটিস হলে বা ডায়াবেটিস ধরা পরলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় বা কমে যাওয়ার আশংকা থাকে।

চর্মরোগ
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে, খোসপাঁচড়া, ফোঁড়া, চর্মরোগ ইত্যাদি হয়েছে। আর এ ধরণের রগ গুলো সহজে নিরাময় ও হতে চায় না। মূলত এ সকল কারণ হলো ডায়াবেটিসের লক্ষণ। যদি খেয়াল করেন এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তাহলে আপনারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চেক-আপ করে নিতে পারেন। তাহলে আপনারা নিশ্চিত হতে পারবেন।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

এতক্ষণ আমরা ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, ডায়াবেটিস কেন হয় এবং ডায়াবেটিস এর নানান ধরণের সমস্যা সম্পর্কে জানলাম। চলুন এবার ডায়াবেটিস এর প্রতিকার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। ডায়াবেটিস তার সাথে অনেকগুলো রগ বালাই সাথে করে নিয়ে আসে তাই ডায়াবেটিস ধরা পড়লে শরীরের একতা নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই নিয়ম করে হাঁটাচলা এবং ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। চলুন এবার জেনে নেই যে ডায়াবেটিস হলে আমাদের করনীয় গুলো কি কি।

● খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখা
● ঔষধ সেবনে সচেতন থাকা
● পরিমিত পরিমাণে শারীরিক কসরত করা এবং
● ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা অবলম্বন করা

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ প্রতিকার বা প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস হলে করণীয় ইত্যাদি সম্পর্কে সকলের জানা উচিৎ। যা আমাদের কে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করবে এবং সহজেই এ ধরণের রগ নিরাময় করা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল?

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২২

আমাদের শেষকথা
আমাদ্র আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো কি কি ডায়াবেটিসের কারন ইত্যাদি সম্পর্কে আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন। ডায়াবেটিস নিরাময়ে জন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে আমাদের জানা উচিৎ।

আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য টিপস, ভ্রমণ, টেকনোলোজি, অনলাইন ইনকাম, ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে যাচ্ছি। আশা করি এই ব্লগটি আপনারা পছন্দ এবং উপভোগ করবেন।