ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে আজকে আলোচনা করবো। ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। কিন্তু সেই ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি থাকে ভূল তাহলে হতে হবে নানান ধরনের ভোগান্তির স্বীকার। জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা বর্তমানে এখন সব ধরনের কাজের ক্ষেত্রে NID বা জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন, ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি, ভোট দেওয়া, পাসপোর্ট তৈরি ইত্যাদি নানান ধরনের কাজ রয়েছে।
যে সকল কাজগুলো সম্পাদন করার জন্য NID কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র এর প্রয়োজন হয়। নতুন ভোটার আইডি কার্ড এর জন্য নিবন্ধন করার পর দেখা যায় যে, আমাদের অনেকেরই নাম, পিতা মাতার নাম, ঠিকানা ইত্যাদি ভূল থাকে। আর আজকের এই ব্লগ পোস্ট এর মাধ্যমে আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরবো কিভাবে আপনারা ভোটার আইডি কার্ড এর ভূল তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কার্যকলাপের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি নথি হলো স্মার্ট আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র। ২০০৮ সনের ২২ জুলাই থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়েছে ইলেকট্রনিক চিপ যুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড যা কিনা আমরা স্মার্ট কার্ড বলে চিনি।
২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছে এর অনলাইন সেবা। এখন অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন থেকে শুরু করে স্মার্ট আইডি কার্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন জরুরি সেবাও পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। অনেক সময় কিছু অসাবধানতার কারণে জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যগুলো ভূল হয়ে যায়। যার ফলে ভোগ করতে হয় নানান ধরনের ভোগান্তি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়মগুলো সম্পর্কে।
এক নজরে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন পদ্ধতি
স্মার্ট আইডি কার্ডের অনলাইন সেবাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সেবা হলো জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য সংশোধন। বাংলাদেশ NID পোর্টাল থেকে এই সেবা টি পাওয়া যাবে। এর জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
- NID নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট চালু করা।
- স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দেওয়া।
- প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র আপলোড করার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য হালনাগাদ করা।
এই পদ্ধতি অবলম্বন করে জাতীয় পরিচয়পত্র এর তথ্য সংশোধন করা যাবে। আবেদন করার পরে নির্ধারিত কার্যদিবসের পর সংশোধন ফি জমা দেওয়ার সময় ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে বার্তা আসবে এবং সেইসাথে সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র টি ও ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হবে। অতঃপর সেটি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করার পর প্রিন্ট করে লেমিনেটিনহ করার পর ব্যবহার যোগ্য করা যাবে।
নোটঃ ইলেকট্রনিক চিপ যুক্ত সংশোধিত স্মার্ট আইডি কার্ড পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রার্থী কে তার ভোটার অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া অফিস চলাকালীন কার্যদিবসে NID সংক্রান্ত অন্যান্য যে কোনো তথ্য জানতে যোগাযোগ করুন ১০৫ নাম্বারে।
স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধন এবং ফি ও কার্যদিবস
স্মার্ট আইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি দুইভাবে ধার্য করা হয়ে থাকে।
১। স্মার্ট আইডি কার্ডের সামনের ও পেছনের অংশে কিছু তথ্য থাকে। যে তথ্যগুলো নাগরিকরা বা ভোটার আইডি কার্ড আবেদনকারীরা ফরম-২ এর মাধ্যমে হালনাগাদ করে থাকেন। সামনের অংশে বাংলায় ও ইংরেজিতে পরিচয়পত্রধারীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, ছবি, জন্ম তারিখ, সাক্ষর ও এনআইডি নাম্বার, ইত্যাদি উল্লেখ থাকে অন্যদিকে পেছনের অংশে থাকে ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, জন্মস্থান ইত্যাদি।
উপরক্ত তথ্যগুলো যদি কোনো কারণে পরিবর্তন বা সংশোধন করতে চান তাহলে আপনাকে সংশোধন ফি বাবদ প্রথমবার ২৩০ (দুইশত ত্রিশ) টাকা, দ্বিতীয়বার সংশোধনের জন্য ৩৪৫ (তিনশত পয়তাল্লিশ) টাকা এবং তারপর থেকে প্রতিবার সংশোধন বা তথ্য পরিবর্তন করার জন্য ৫৭৫ (পাঁচশত পঁচাত্তর) টাকা সংশোধন ফি পরিশোধ করতে হবে।
২। ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন বা আবেদনের সময় নাগরিকরা ফরম-২ এর মাধ্যমে এমন কিছু তথ্য প্রদান করেন যে তথ্যগুলো সরাসরি ভোটার আইডি কার্ডে উল্ল্যেখ থাকে না। যেমন, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পাসপোর্ট, মোবাইল নাম্বার, পেশা ইত্যাদি। আপনি যদি এসকল তথ্য পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে এর ফি বাবদ ১১৫ (একশত পনেরো) টাকা পরিশোধ করতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড এর সংশোধন ফি রকেট, বিকাশ, টি ক্যাশ, ওকে ওয়ালেট বা সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে পরিশোধ করা যাবে। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করার ৩০ মিনিট পর থেকে তথ্য সম্পাদন শুরু করা যাবে। এবং সংশোধিত স্মার্ট আইডি কার্ড হাতে পেতে সর্বোচ্চ ২ মাস পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সংশোধন ফি জমা দেওয়া ৩০ মিনিট পর থেকে আপনি আপনার তথ্য গুলো নতুন করে সংশোধন করতে পারবেন। তবে এখানে নতুন করে তথ্য হালনাগাদ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। প্রার্থীর নাম বা জন্ম তারিখ ভূল হয়ে থাকলে সেটি সংশোধন করার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রয়োজন তা হলো।
১। জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র।
২। মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষার সনদপত্র। শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষার নিচে হয় এবং প্রার্থী সরকারি স্বায়ত্বশাসিত বা অর্ধ-স্বায়ত্বশাসিত অথবা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থায় কর্মরত অবস্থায় থাকেন। তাহলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চাকরির বই, মাসিক বিল অর্ডার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট অথবা ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে।
৩। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী এর NID কার্ড এর কপি এবং কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রয়োজন হবে। বিবাহিত কারণে যদি নারীর নামের সামনে বা পেছনের অংশ পরিবর্তন করতে হয় সেক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামা বা তালাকনামা অথবা স্বামীর মৃত্যু সনদ। ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালত কতৃক অথবা বিবাহ বিচ্ছেদ ফরমানের সত্যায়িত কপি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে।
৪। ধর্ম পরিবর্তন বা অন্য কোনো কারণে প্রার্থীর পুরো নাম পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে অবশ্যই ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট কতৃক হলফনামা, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির কপি, ওয়ারিশ সনদপত্র, পোর বা ইউনিয়ন অথবা সিটি কর্পোরেশন কতৃক প্রার্থীর নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হবে।
যদি কোনো কারণে পিতা বা মাতার নামের পরিবর্তন করতে হয় তাহলে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বা সমমান পরীক্ষার সনদপত্র এবং প্রার্থীর পিতা, মাতা, ভাই, বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। পিতা বা মাতার নামের আগের অংশে “মৃত” সংযোজন করতে চাইলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার মৃত্যু সনদ দাখিল করতে হবে।
ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে প্রার্থীর বাসা বা জমির দলিল, বিদ্যুৎ বিলের কপি, পানি বা গ্যাস বিলের কপি, টেলিফোন, অথবা বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র বা রশিদ জমা দিতে হবে। এছাড়া রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন করার জন্য ডাক্তার কতৃক রক্তের গ্রুপ সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তন করার জন্য প্রার্থীকে তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র সত্যায়িত করে দাখিল বা জমা করতে হবে। এ কাগজগুলো যারা সত্যায়িত করতে পারবেন তারা হলেন, সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এমবিবিএস ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসাসনিক উর্ধতন কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান।
আরও পড়ুন: জমির মালিকানা বের করার উপায়
আরও পড়ুন: ভোটার তালিকা দেখার উপায়
আরও পড়ুন: নতুন আইডি কার্ড কিভাবে দেখব
আমাদের শেষকথা
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে আজকে জানতে পারলাম এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে। জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট আইডি কার্ড এর তথ্য সংশোধন করার ক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ড এর সামনের ও পেছনের অংশে উল্লেখিত তথ্যগুলোর দিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিতে হবে। এবং যে সকল তথ্য স্মার্ট কার্ড এ উল্লেখিত থাকে না সে সকল তথ্য পরিবর্তন না করলেও তেমন কোনো সমস্যা নেই। আশা করি এর আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত তথ্যবহুল টেকনোলজি, কম্পিউটার, মোবাইল, ভ্রমণ, ইত্যাদি সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে আসছি। আশা করি আপনারা আমাদের এই ব্লগটি পছন্দ করবেন।