জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি

আজকে আর্টিকেল এর মাধ্যমে শেয়ার করব কিভাবে জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি এই বিষয়ে। জমি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রতিটি মানুষের জন্য। কারণ এটি একটি সম্পদ। এই জমির কাগজপত্র সঠিক রাখার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এই দেশে সব থেকে জমির কাগজপত্র নিয়ে মানুষ বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। তাই আপনাকে জমির কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত ভালো ধারণা থাকতে হবে। তাহলে আপনি জমির সম্পর্কিত যে কোন কাগজপত্রে কোন সমস্যা বা ভোগান্তিতে পড়বেন না। এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা শেয়ার করবো বিভিন্ন খতিয়ান দাগ নম্বর সম্পর্কে এবং আরো জানতে পারবেন জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি সম্পর্কেও।

জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি

জমির খতিয়ান বা পর্চা কাকে বলে?

খতিয়ান বা পর্চা এ দুটি একই বিষয়। জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য সরকার কর্তৃক যে দলিল থাকে তাকে খতিয়ান বলে। এই পর্চা বা খতিয়ান বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে ডেকে থাকে। সরকারি জমি জরিপ করার সময় এই জরিপের ধাপগুলো অতিক্রম করে তা চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬২ তে জমির দাগের বর্ননা সহ সরকার কতৃক যে নথিপএ প্রকাশ করা তাকে খতিয়ান বলে।

খতিয়ানে যেসব বিষয় উল্লেখ থাকে

জমির খতিয়ান ও পর্চা তে যেসব বিষয় গুলি উল্লেখ থাকে সে বিষয়গুলি নিম্নে দেওয়া হলঃ

  • ভূমির মালিকের নাম, তার পিতার নাম ও ঠিকানা সমূহ।
  • স্টেটের মালিকের নাম, তার পিতার নাম ও ঠিকানা সমূহ।
  • জমির দখলদার কর্তৃক জমির বর্তমান অবস্থান, সীমানা ও পরিমাণ।
  • ভূমি বা জমির বর্তমান দখলদারের নাম, তার পিতার নাম, ঠিকানা সমূহ এবং দখলদার কোন শ্রেণীভুক্ত।
  • জমির খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমাণ ও বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খাজনা।
  • বনভূমি, গরুচরন ভূমি ও মৎস্য খামারের জন্য ধার্যকৃত ধারণকৃত অর্থ।
  • জমিতে যে খাজনার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে তার বিবরণ।
  • ইজারাকৃত জমির জন্য জমির মালিকের অধিকার ও কর্তব্যসমূহ।
  • ২৬ ধারা অনুযায়ী ন্যায় সঙ্গত নির্ধারিত খাজনা।
  • যদি খাজনা বৃদ্ধিক্রম থাকে তাহলে তার বিবরণ।
  • ইজারাকৃত জমির জন্য জমির মালিকের অধিকার ও কর্তব্য।
  • পথ চলার অধিকার ও জমি সংক্রান্ত অন্যান্য অধিকারসমূহ।
  • খতিয়ান নং,দাগ নং, মৌজা নং, বাট্টা নং, জেএল নং, এরিয়া নং ইত্যাদি এসব উল্লেখ থাকবে খতিয়ানে।

জমির খতিয়ান এর প্রকারভেদ

বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে তিনটি জরিপ হয়েছে। এই জরিপ গুলি হলঃ

  • সি এস খতিয়ান
  • এস এ খতিয়ান
  • আর এস খতিয়ান
  • বি এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ

সি এস খতিয়ানঃ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যে জরিপ শুরু হয় তা হল সি এস খতিয়ান বা Cadastral Survey। এই ভূমি জরিপ ১৮৮৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৪০ সালে শেষ হয়েছিল। আমাদের দেশে এই জরিপ শুরু হয় কক্সবাজার রামু থেকে এবং এই জরিপ শেষ হয় দিনাজপুরে। দেশের দুটি অঞ্চল এই জরিপের আওতায় আসেনি। সে দুটি অঞ্চল হল সিলেটের আসাম প্রদেশ এবং চট্টগ্রাম। কারণ এই দুটি অঞ্চলের মধ্যে বিরোধিতা থাকার জন্য একটি অঞ্চলকে জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই সি এস জরিপ হলো বাংলাদেশের সর্বপ্রথম জরিপ যার নাম সি এস খতিয়ান। এই খতিয়ানের বাংলাদেশ ফরম নম্বর হলো ৫৪৬৩ এবং এই খতিয়ান উপর থেকে নিচে লম্বালম্বি হয়ে থাকে।

এস এ খতিয়ানঃ ১৯৫০ সালের দিকে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ করা হয় এবং এই আইন পাসের পর তৎকালীন সরকার তখন জমিদারি অধিগ্রহণ সাব্যস্ত করে থাকেন। তখনকার সময়ে সরকারি আমিনগন উপস্থিত মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে সি এস খতিয়ান সংশোধন করে নতুন এস এ খতিয়ান তৈরি করেন। এই খতিয়ানকে ৬২ খতিয়ান বা টেবিল খতিয়ান বলা হয়ে থাকে। এই খতিয়ান এক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে এবং এই খতিয়ান হাতে লেখা হয়।

আর এস খতিয়ানঃ এস এ খতিয়ান এর কাজ শেষ হওয়ার ৫০ বছর পর আর এস খতিয়ান জরিপ এর কাজ শুরু হয়। এস এ খতিয়ান এর ভুলগুলো সঠিকভাবে সংশোধন করা হয়। এই আর এস খতিয়ান অনুযায়ী জমি ক্রয়-বিক্রয়, মালিকানা, দখল এর উপর নির্ভর করে করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই জরিপ কে বাংলাদেশ খতিয়ান বলা হয়ে থাকে। এই খতিয়ান এক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে এবং ফরম এর উপরে ডান পাশে ‘রেসার্তে নং’ লেখা থাকে। বি এস খতিয়ান বা বর্তমানে সিটি জরিপ আর এস খতিয়ান এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বি এস খতিয়ান বা সিটি জরিপঃ বাংলাদেশের সর্বশেষ যে জরিপটি অনুষ্ঠিত হয় তা শুরু হয় ১৯৯৮ – ১৯৯৯ সালে। এই জরিপের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এই জরিপ মহানগর জরিপের পরিচিত। বিএস খতিয়ানে ৯ টা কলামে বিজরী থাকে। জমির যে ধরন তা উল্লেখ করা থাকে।

জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি

জমি সংক্রান্ত হিসাব কাগজপত্র গুলো একটু জটিল হয়ে থাকে এটা স্বাভাবিক। বেশ কিছুদিন আগেও জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করা বা কাগজ উঠানোর জন্য অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হতো। বর্তমান সময়ে অনলাইনের কারণে আমরা খুব সহজেই জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারি। বর্তমানে অনলাইনের যুগে আমরা খুব সহজেই জমি সংক্রান্ত তথ্য গুলো ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারছি। অনলাইনের মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত তথ্য গুলো খুব সহজেই বের করা যায় বা জমি সংক্রান্ত অনেক বিষয় আপনি বের করে নিতে পারবেন অনলাইনের মাধ্যমে। কিন্তু এ বিষয়গুলি অনেকেরই অজানা রয়ে গেছে। তাই আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি এই বিষয়ে।

জমির খতিয়ান মূলত চার প্রকার পড়ে থাকে। আপনি কোন খতিয়ান চাচ্ছেন বা প্রয়োজন সেটি আপনাকে প্রথমে সিওর হতে হবে। তাহলে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। প্রথমে আপনার কাছে মোবাইল বা কম্পিউটার এর সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। তারপর যেকোন ব্রাউজারে প্রবেশ করে ভূমি অফিস এর ওয়েবসাইট যেতে হবে। বা https://eporcha.gov.bd/khatian-search-panel লিংক এ প্রবেশ করুন। ভূমি মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনি প্রথমে একটি ফরম দেখতে পারবেন। এবার আপনি আপনার তথ্য দিয়ে এই ফর্ম গুলো পূরণ করবেন। এই ফরম টা কিভাবে পূরণ করতে হবে সেই নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হচ্ছে।

ফরমের প্রথমে দেখা যাবে বিভাগ অপশন ।আপনি সেখানে আপনার নিজের বিভাগ অবশ্যই সিলেক্ট করবেন। উপরের অংশ আপনি দেখতে পারবেন জেলা নামে একটি অপশন সেখানে আপনি যে জেলায় অবস্থান করছেন সে জেলা টি সিলেক্ট করবেন। একটু উপরে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছিলাম যে আপনি কোন খতিয়ানের তথ্য জানতে চাচ্ছেন তা আগে সিওর হয়ে নিন। এখানে চারটি খতিয়ানের অপশন দেখা যাচ্ছে। আপনি যে খতিয়ান এর তথ্য চাচ্ছেন সেই খতিয়ান টি সিলেক্ট করুন। এরপর আপনি দেখতে পারবেন উপজেলা অপশন। আপনি যে উপজেলায় বসবাস করেন সেই উপজেলাটি সিলেক্ট করুন।

এবার আপনি দেখতে পারবেন মৌজা নামক অপশন। সেখানে আপনার জমির কাগজে যে মৌজা দেওয়া থাকবে সেই মৌজা সিলেক্ট করবেন। আপনি যে জমির খতিয়ান বের করতে চান সেই জমির খতিয়ান নামক অপশনটিতে বসিয়ে দিন। এখন আপনাকে জমির দাগ নাম্বার থেকে যে খতিয়ান বের করতে চাচ্ছেন সেই দাগ নাম্বারটি এই অপশনে বসিয়ে দিতে হবে। এরপর জমির মালিকের নাম বসিয়ে দিবেন এবং পিতা-মাতার নাম অপশন থাকলে তা বসিয়ে দিবেন। উপরের কাজগুলো সম্পন্ন করার পর নিচে দেখতে পারবেন একটি সিকিউরিটি ক্যাপচা। ক্যাপচা বক্সে কিছু লেখা দেখতে পারবেন সে লেখাগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন এবং অনুসন্ধান করুন নামক অপশন দেখতে পাবেন সেখানে ক্লিক করুন।

আরও পড়ুন: জমির মালিকানা বের করার উপায়

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট দিয়ে ভ্যাকসিন নিবন্ধন করার উপায়

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

আমাদের শেষকথা 

আশা করি আপনারা কিভাবে জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন দাগসূচি এবং চার প্রকার খতিয়ান এর বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি আশা করি উপকৃত হবেন।

আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত তথ্যবহুল আর্টিকেল পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড, টেকনোলজি,  কম্পিউটার, মোবাইল, ভ্রমণ, ইত্যাদি সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে আসছি। আশা করি আপনারা আমাদের এই ব্লগটি পছন্দ করবেন।