ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল

ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল থাকে এ সম্পর্কে আমদের মধ্যে অনেকেই অবগত নয়। ডায়াবেটিস সুপরিচিত একটি রোগের নাম। এটা এমন একটা রোগ যা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ডায়াবেটিস ভয়ংকর একটি রোগ।  বলা হয়ে থাকে প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। আর প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষের মৃত্যু হয় ডায়াবেটিস রোগের কারণে। 

ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব পা থেকে মাথা ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোতে এর চাপ ফেলতে পারে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাঁত, চোখ, মুখ,  কিডনি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ডায়াবেটিসের কারণে মাঝে মাঝে যৌন সমস্যা হতেও দেখা যায়। পর্যায়ক্রমে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে শরীরে সকল অংশ কে কাবু করে ফেলতে পারে ভয়ংকর এই রোগ।

ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যে, ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস এর লক্ষণ,  ডায়াবেটিস এর কারণ ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট  হলে নরমাল থাকে ? বাচ্চাদের ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল, খাওয়ার পর ও খাবারের আগে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কে আরও অন্যান্য তথ্য গুলো। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনারা ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। এবং ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সে বিষয়ে জানতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই ডায়াবেটিস সম্পর্কিত তথ্যগুলো। 

ডায়াবেটিস কি?

দেহযন্ত্র যদি যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে কিংবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন গ্রহণে ব্যার্থ হয় তাহলে যে রোগ হয় সেটি ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। ডায়াবেটিস একটি বহুমূত্র রোগ। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতির অসামঞ্জস্য দেখা যায়। ইনসুলিনের ঘাটতি হলো এই রোগের প্রধান কারণ।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ 

ডায়াবেটিসের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। নিচে উল্লেখ করা কারণ গুলো মূলত ডায়াবেটিস এর মূল লক্ষণ। এখন আমরা ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো একে একে জানার চেষ্টা করবো।

  • ঘন ঘন প্রসাব হওয়া। মূলত এ কারণেই এটি একটি বহুমূত্র রোগ হিসেবে পরিচিত।
  • অধিক তৃষ্ণা পাওয়া এবং চোখ মুক শুকিয়ে যাওয়া।
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা। 
  • স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস পাওয়া ও চোখে ঝাপসা দেখা। 
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং সবসময় ক্লান্ত অনুভব হওয়া।
  • ত্বক চুলকানি,  ত্বকে ইনফেকশন হওয়া। 
  • ত্বকে সংক্রমণ হওয়া এবং কাটা বা ক্ষত স্থান ধীর গতিতে সুস্থ হওয়া।

ডায়াবেটিসের কারণ 

খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের প্রধান কাজ হলো আমরা যে খাবার খাই তাই গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় অথবা ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। তখন কিন্তু আমাদের শরীরে গ্লুকোজ থেকেই যায়। আর আমরা সেই অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলছি। 

অর্থাৎ ডায়াবেটিসের মূল বা প্রধান কারণ হলো আমাদের শরীরে জমে থাকা গ্লুকোজ। যখন ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ করতে পারছে না তখন আমাদের শরীরে জমা হওয়া গ্লুকোজের পরিমাণ খাবার খাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ডায়াবেটিসের কারণে মূলত আমাদের শরীরের নানান রকম ক্ষতি হয়ে থাকে যা আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি।

ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল?

এতক্ষণ আমরা জানলাম ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিসের লক্ষণ, ডায়াবেটিসের কারণ বা কিভাবে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এবার আমরা জানবো যে ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল থাকে।

খাবার খাওয়ার আগে আমাদের শরীরে যদি গ্লুকোজের পরিমাণ ৬ বা এর নিচে থাকে এবং খাবার খাওয়ার পর শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ ১০ বা এর নিচে থাকে তাহলে আমরা ধরে নেই যে আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস নেই।

অন্যদিকে খাবার খাওয়ার আগে বা খালি পেটে যখন আমাদের শরীরে থাকা গ্লুকোজের পরিমাণ ৭ বা এর বেশি থাকে এবং খাবার খাওয়ার পর আমাদের শরীরে যদি গ্লুকোজের পরিমাণ ১১ বা এর বেশি হয়। তখন আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে বলে এটা আমরা বিবেচনা করি। ডায়াবেটিস সাধারনত দুই ধরনের হয়। 

টাইপ – ১  যা সবাই বুঝতে পারে 

হটাৎ করে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়া। ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা গুলো হলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। এটা এক ধরনের ডায়াবেটিস। কারণ এরকম সমস্যা হলে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি যে, আমাদের শরীরে ডায়াবেটিস রয়েছে।

টাইপ – ২ যা বুঝা যায় না 

এ ধরনের ডায়াবেটিস হলে কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি কেউ বুঝতে পারেন না যে তার ডায়াবেটিস রয়েছে। এরকম ডায়াবেটিস হলে দেখা যায় যে,  হঠাৎ  করে প্রসাব বেড়ে যায়, খাবার খাওয়ার পরেও ক্ষুধা না মেটা বা বারবার ক্ষুধা লাগা, ক্লান্ত লাগা, ঝিম ধরা ভাব, আবার কাটা যাওয়া বা ক্ষত স্থান ঠিক হতে অনেক সময় লাগা ইত্যাদি। এরকম কিছু লক্ষণ দেখা দেওয়ার ফলে এ ধরণের ডায়াবেটিস বোঝা যায় না। 

অনেক সময় বোঝা না যাওয়ার ফলে দেখা যায় যে, গরে ৩ বা ৪ বছর পর এই ডায়াবেটিস ভয়াবহ রূপ ধারণ করে এবং আমাদের শরীরের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়। যেমন, চোখে রক্ত জমে যায় বা হার্টের ব্লক, বা যকৃতে ক্রিটেনিন বেশি হয়ে যায়। এরকম অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। 

ডায়াবেটিস হলে করনীয় 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমদের কে কিছু নিয়ম অবলম্বন করতে হবে এবং আস্তে আস্তে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। চিকিৎসকরা বলেন যে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ৪ টি কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ঔষধ সেবন করা, ইনসুলিন গ্রহণ করা, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা, এবং মানসিক সমর্থন করা। 

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে। ঔষধ সেবনের বেলায় অনিয়ম করলেই ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে। 
  • যেহেতু আমাদের শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যাওয়া যা ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ না করলে ডায়াবেটিস হয়। তাই ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ করতে হবে। 
  • ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই সবার আগে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে।
  • ডায়াবেটিস হলে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে ফেলা যাবে না। যেহেতু ডায়াবেটিসের ফলে শরীর ক্লান্ত থাকে। আর ক্লান্ত থাকলে কাজে মন বসে না। তাই মানসিক ভাবে আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। এটা সব থেকে জরুরী। 

আরও পড়ুন: খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা ২০২২

আরও পড়ুন: অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং অ্যালোভেরার ব্যবহার

আরও পড়ুন: পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের শেষকথা

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি, ডায়াবেটিস কি, এর লক্ষণ, ডায়াবেটিসের কারণ, ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল থাকে এবং কত পয়েন্ট হলে ডায়াবেটিস হয় এছাড়া ডায়াবেটিস হলে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে ডায়াবেটিস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এবং এই পোস্ট টি আপনার উপকারে এসেছে। 

আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য টিপস, ভ্রমণ, রূপচর্চা, টেকনোলজি, কম্পিউটার, মোবাইল, রিভিউ, টিপস সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি এই ব্লগের মাধ্যমে আপনি নতুন নতুন সব তথ্য জানতে পারছেন। আমরা আশা করি এই ব্লগটি আপনারা পছন্দ করবেন এবং আপনার বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন।