ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না। আবার অনেকেই আছেন যারা কিনা এর কিছু কিছু সম্পর্কে ধারণা রাখেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখেন না।আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো। অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং কোন খাবার গুলো খেলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বা ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে তার আগে আমাদের কে জানতে হবে ডায়াবেটিস কি এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য। 

ডায়াবেটিস কি?

ডায়াবেটিস খুব ক্রিটি-কাল একটি রোগ। দেহযন্ত্র যদি যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে কিংবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন গ্রহণে ব্যর্থ হয় তাহলে যে রোগ হয় সেটি ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। ডায়াবেটিস একটি বহুমূত্র রোগ। ডায়াবেটিসের কারণে রক্তে চিনি বা শর্করার উপস্থিতির অসামঞ্জস্য দেখা যায়। ইনসুলিনের ঘাটতি হলো এই রোগের প্রধান কারণ।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ২০২২

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আমাদের কে অবশ্যই নিয়ম মেনে খাবার খেতে হবে। যেমন, বেশ কিছু খাবার রয়েছে যে খাবারগুলো ডায়াবেটিস রগীদের জন্য খুবই উপকারী। আবার এমন ও কিছু খাবার রয়েছে যে খাবার গুলো খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস আরও বেড়ে যায়। তাই আপনি যদি এই রোগের ভুক্তোভোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। চলুন তাহলে এবার আমরা ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্ঠা করি। 

ডায়াবেটিস যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

ডায়াবেটিসের সমস্যা ইদানীং অনেক বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতি ঘরেই ডায়াবেটিসের রোগী দেখা যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক বেশি সাবধানতা প্রয়োজন। কিছু খাবার খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। আসুন জেনে নেয়া যাক এমনই কিছু ক্ষতিকর খাবার সম্পর্কে।

১. সাদা চাল

সাদা চালের ভাত যতো বেশি খাওয়া হয় ততো বেশি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায়। প্রায় ৩,৫০,০০০ মানুষের উপর গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রতিদিন সাদা চালের ভাত নিয়মিত খাওয়ার ফলে প্রায় ১১% টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই রোগীরা কতোটুকু ভাত খাওয়া স্বাস্থ্যকর তা জানতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

২. চাইনিজ খাবার

চাইনিজ খাবারে অনেক বেশি ফ্যাট রয়েছে, ক্যালরি, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রেট যা হুট করেই দেহের সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে অরেঞ্জ, সুইট অ্যান্ড সাওয়ার ধরণের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।

৩. বোতল-জাত ফলের জুস

স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে সোডা বাদ দিয়ে ফলের জুস পান করবেন? কিন্তু জেনে রাখুন যে, বোতল-জাত ফলের জুস পান করা এবং সোডা পান করার মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নেই। কারণ ফলের জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও ক্যালরি যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৪. কলা ও তরমুজ

সবাই জানেন তাজা ফলমূল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাজা সব ফল স্বাস্থ্যকর নয়। কলা এবং তরমুজের মতো ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি যা রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ায়। তাই এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো।

৫. রিফাইন্ড সিরিয়াল

সুইটেন্ড ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল ধরণের খাবারগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়াও ইনস্ট্যান্ট ধরণের স্বাস্থ্যকর ওটমিলও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৬.ঘন দুধের তৈরি কোন খাবার

দুধ খাওয়া ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভাল। কিন্তু কিছু খাবার যাতে দুধের পরিমাণ খুব বেশি যেমন – দই, দুধের তৈরি ক্রিম, চিজ এই খাবার গুলো ডায়াবেটিক রোগীদের না খাওয়াই উত্তম।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার

ডায়াবেটিসের প্রকোপে স্বাস্থ্য যেমন ভেঙে যায়, তেমনই কি খাওয়া উচিত, কি উচিত নয় তাই নিয়েও দ্বিধাধন্দে পড়ে যান অনেকেই। এক দিকে বিস্তর ‘না’, অন্যদিকে ‘পেট খালি রাখা যাবে না’। এই দুই মিলিয়ে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না কি খেয়ে পেট ভরাবেন। চলুন এবার আমরা জেনে নেই ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা গুলো সম্পর্কে।

ইয়োগার্ট ও সবজি: ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ বা স্ন্যাকস হিসেবে যে কোনও সময়ই খেতে পারেন টক দইয়ের সঙ্গে টাটকা সবজি। পেট ভরবে, শরীরও ঝরঝরে থাকবে।

স্প্রাউট: কল বের হওয়া মুগ, ছোলা বা স্প্রাউট চাট ডায়াবেটিকদের জন্য খুবই ভাল স্ন্যাকস। পুষ্টি যেমন মিলবে তেমনই রক্তের শর্করাও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

ফল: ডায়াবেটিকদের যেমন ফল খাওয়া উচিত তেমনই আবার মিষ্টি ফল বেশি খেলেও সমস্যা। বেছে বেছে এক বাটি মরসুমি ফল যদি সকালে বা দিনের যে কোনও সময় খান তাহলে শরীর অনেকটাই ঝরঝরে থাকবে।

ডিম: সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশি সময় না থাকলে ব্রেকফাস্টে শুধু ডিম সেদ্ধ খেয়ে বেরিয়ে পড়ুন। অফিসে লাঞ্চে খাওয়ার জন্যও সঙ্গে নিতে পারেন।

ইডলি: ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ যে কোনও সময়ই ডায়াবেটিকদের জন্য উপাদেয় খাবার ইডলি। পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকবে। খিদেও নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

স্মুদি: টাটকা ফল, সবজি, ডাবের জল দিয়ে পুষ্টিকর স্মুদি ডায়াবেটিকদের জন্য সেরা খাবার। সারা গরম কাল ব্রেকফাস্টে খেতে পারেন স্মুদি।

ধোকলা: এক সঙ্গে পেট ভরানো, পুষ্টিকর ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অসাধারণ ধোকলা। 

বাদাম: আখরোট, আমন্ড স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ডায়াবেটিকরাও চোখ বুজে খেতে পারেন বাদাম।

ঝাল: সুজি বা চিঁড়ের পোলাও: ব্রেকফাস্ট বা দুপুরে লাঞ্চে ঝাল সুজি বা চিঁড়ের পোলাও খেলে পেট ভরা থাকবে। রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরলের মাত্রাও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।

হোল গ্রেন ক্র্যাকার: সব সময় ব্যাগে রাখুন। বিকেলের দিকে খিদে পেলে খেয়ে নিন হোল গ্রেন ও মাল্টিগ্রেন ক্র্যাকার।

ডায়াবেটিস থাকলে খালি পেটে থাকা যেমন উচিত নয়, তেমনই এই ক্র্যাকার খিদে মিটিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পেট ভরাতে চাইলে সঙ্গে দই খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা ১০ টি উপকারী খাবার

ডায়াবেটিস নির্দিষ্ট মাত্রার বেশী হয়ে গেলে তা শরীরের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণে রাখাই সর্বোত্তম পস্থা। এ জন্য প্রয়োজন কঠোর নিয়মানুবর্তিতা। এর পাশাপাশি কিছু খাবারও ডায়াবেটিস রোগীকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো ডায়াবেটিস প্রতিরোধও করে।

ডায়াবেটিস ঠেকাতে ১০ খাবার যেমন:

সবুজ চা: সবুজ চা মানুষের শরীরে ইনসুলিনের মতো কাজ করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সবুজ চা দারুণ উপকারী। নিয়মিত সবুজ চা খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস কনট্রোলে রাখা যায়।

মাছ: গবেষণায় দেখা যায়, মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিনের সংবেদনশীলতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি গ্লুকোজের ঘনত্ব কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সহায়তা করে। এতে চর্বিহীন প্রোটিন রয়েছে।

টক দই: টক দই একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য। এতে চিনির পরিমাণ খুব কম। এটি রক্তে চিনির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। দুপুরের খাবারের সঙ্গে বা বিকেলের নাস্তায় স্যান্ডউইচের সঙ্গে টক দই খাওয়া যায়। এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ডিমের সাদা অংশ: ডিম পেশি গঠনকারী খাদ্য। এতে উচ্চ মানের প্রোটিন রয়েছে। ডিমের সাদা অংশে উচ্চ মানের চর্বিহীন প্রোটিন এবং কম মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা ২ ধরণের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।

লেবু: লেবু ও লেবু জাতীয় ফল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে। তবে লেবু জাতীয় ফল খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়। জাম্বুরা, কমলা, লেবু এবং লাইম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিনের মতো কাজ করে।

সবুজ শাক সবজি: সবুজ শাক সবজি ২ ধরনের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। পালং শাক, পাতা কপি, শালগম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা ইত্যাদি খাবারে ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম। গবেষণায় বলা হয়, সবুজ শাক সবজি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে।

শস্য দানা: প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শস্য দানা মানুষের শরীরের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কমে। আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে শস্য দানা।

মটরশুঁটি: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাদ্য মটরশুঁটি। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১ কাপ মটরশুঁটি খেলে ২ ধরনের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এতে উচ্চমাত্রায় শর্করা, চর্বিহীন প্রোটিন এবং আঁশ রয়েছে। এটি শরীরের রক্তে চিনি কমাতে সাহায্য করে; হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমায়।

ওয়াইল্ড স্যামন: ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অন্যতম একটি ঔষধি খাদ্য ওয়াইল্ড স্যামন। এতে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ রয়েছে। ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি বড় উৎস এটি। ডায়াবেটিস রোগের পাশাপাশি কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকিও কমায় ওয়াইল্ড স্যামন।

আরও পড়ুন: ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে নরমাল?

আরও পড়ুন: খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা ২০২২

আরও পড়ুন: অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং অ্যালোভেরার ব্যবহার

আমাদের শেষকথা
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা গুলো। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে, কোন খাবার গুলো দায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো এবং কোন খাবার গুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

আমাদের এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত টেকনোলোজি, মোবাইল, রিভিউ, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য টিপস, রুপচর্চা ইত্যাদি বিষয়ের উপর আর্টিকেল পাবলিশ করে যাচ্ছি। এবং আবাদের এই ধারা অব্যহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। আশা করি এই ব্লগটি আপনাদের পছন্দ হবে।