দারুচিনির নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। সাধারনত অনেকেই দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। আমাদের মধ্যে অনেকেই দারুচিনি শুধুমাত্র মশলা হিসেবে ব্যবহার করে থেকেন। আয়ুর্বেদ অনুসারে দারুচিনির মাধ্যমে নান ধরনের রোগের চিকিৎসা করা যায়। আয়ুর্বেদে দারুচিনি কে বিশেষভাবে বর্ননা করা হয়েছে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
দারুচিনি কি?
দারুচিনি এক ধরনের মশলা। দারুচিনির বাকল, অন্যান্য গাছের ছালের চেয়ে পাতলা, বেশি সুগন্ধযুক্ত এবং হলুদ বর্নের হয়ে থাকে। এই বাকল, রঙে নরম ও মসৃন হয়ে থাকে। দারুচিনি গাছের ফল ছিঁড়ে ফেলা হলে ভেতর থেকে টারপেনটাইনের মত গন্ধ বের হয়ে আসে। এর ফুল সবুজ বা সাদা রঙের ও অনেক ছোট হয়ে থাকে। দারুচিনির পাতা ঘষলে একটি গাড়ো গন্ধ পাওয়া যায়। নানান ধরনের রোগ নিরাময়ে দারুচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রত্যেকটা জিনিসের কিছু ভালো দিক ও খারাপ দিক রয়েছে। দারুচিনি এমন একটি জিনিস যার প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। একইসাথে রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা। এবার আমরা দারুচিনির বেশ কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। আরও জানবো দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
দারুচিনির উপকারিতা
দারুচিনি সেবনের ফলে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ, দাঁত, মাথাব্যাথা, চর্মরোগ, এমনকি মাসিকের সমস্যা জনিত রগগুলো দারুচিনি সেবনের ফলে সেরে যায়। একইসাথে ডায়রিয়া, যক্ষা সহ আরো বিভিন্ন রোগের অধিকারী হলেও দারুচিনি সেবনের ফলে পাওয়া যায় বেশ উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক দারুচিনির আরও বেশ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
● হেঁচকি একটি সাধারন বিষয় হলেও, অনেক লোকের সবসময় হেঁচকি থাকে। এই ধরনের লোকেরা দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন। সাধারনত এ ধরনের সমস্যা সমাধানে দারুচিনি বেশ কার্যকরী। এছাড়াও সর্দি বা কাশি হলে দারুচিনি ব্যবহার করে বেশ উপকার পাওয়া যায়। দারুচিনি গুড়ো করে গরম পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট এর মতো ব্যবহার করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
● অনেক সময় লোকেরা অস্বাভাবিক মাত্রায় বমি করতে থাকে। বমি বন্ধ করতেও দারুচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সামান্য মাত্রা পরিমাণে দারুচিনি ব্যবহারে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
● ক্ষুধা বাড়াতে দারুচিনি বেশ কার্যকরী। শুথি পাউডার, এলাচ, এবং দারুচিনি পাউডার এর মতো মিক্সিং করে সকাল সন্ধ্যা খাবার খাওয়ার আগে সেবন করলে ক্ষুধা বাড়ে।
● কাশির ক্ষেত্রে দারুচিনি বেশ উপকারী। কাশিতে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে সকাল-সন্ধা আধা চা চামচ দারুচিনির গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
● ওজন কমাতে মধু এবং দারুচিনি বেশ কার্যকরী। যার ওজন কমাতে চান তারা পরিমাণ মতো দারুচিনি এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। দৈনিক ৩ বার খাওয়ার ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়া শুরু করবে।
● দারুচিনি, এলাচ ও তেজপাতা সমান পরিমাণে নিয়ে ব্যবহারের ফলে পেটের কিছুনি এবং ব্যাথা ও বমি উপশম হয়।
● প্রাচীনকালে মিসরের ইতিহাসে দারুচিনি ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হতো। এই গাছে বিজ্ঞানীগন নানান ধরনের ঔষধি গুনাবলি খুজে পেয়েছেন। তাই সে সময়কালে এটি এতই বিরল এবং মূল্যবান ছিল যে, রাজাদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত উপহার ছিল।
● হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য দারুচিনি বেশ উপকারী। এটি আমাদের শরীরের মোট কোলেস্টেরল থেকে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায় এবং ভালো এইচডিওল কোলেস্টেরল গুলোকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
● দারুচিনি রক্তচাপ কমাতে ও বেশ কার্যকরী। দারুচিনি রক্ত-শর্করা হ্রাসকারী বৈশিষ্ঠের জন্য অনেক সুপরিচিত। বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, দারুচিনির এন্টি ডায়াবেটিক প্রভাব রয়েছে। এবং এটি ১৫ থেকে ২৯০ শতাংশ পর্যন্ত রক্ত শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
● মস্তিষ্কের কোষের গঠন এবং কার্যকারিতার প্রগতিশীল ক্ষতি থেকে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ এর জন্ম নেয়। দারুচিনি এ ধরনের রোগের উপশম হিসেবে কাজ করে। গেবেষকদের মতে, এটি নিউরন রক্ষা করতে দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে।
দারুচিনির অপকারিতা
প্রত্যেকটা জিনিসের কিছু ভালো দিক ও কিছু খারাপ দিক থাকে। এতক্ষণ আমরা জানলাম দারুচিনির উপকারিতা সম্পর্কে। দারুচিনি যে শুধুমাত্র আমাদের শরীরের জন্য উপকারী তা নয় বরং দারুচিনি আমাদের শরীরের কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ও ফেলতে পারে। এখন আমরা জানবো কি কি কারণে দারুচিনি আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি আমরা।
অতিরিক্ত দারুচিনি সেবনের ফলে আমাদের শরিরে নানান রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত দারুচিনি কখনই সেবন করা যাবে না। আপনার যদি মনে হয় অতি মাত্রায় দারুচিনি সেবনের ফলে দ্রুত আপনার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে তাহলে এই ধারণা টি একেবারেই ভূল ধারণা।
● অতিরিক্ত দারুচিনি সেবনের ফলে লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
● অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়ার ফলে রক্ত হ্রাস পেতে পারে।
● দারুচিনির প্রভাবে ত্বকের অ ক্ষতি হতে পারে।
● অতিরিক্ত দারুচিনি সেবনের ফলে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে।
● গর্ভবতি নারীদের ক্ষেত্রে সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
দারুচিনির অনেক উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু উপরে উল্ল্যেখ করা সতর্কতা গুলো ভূলে গেলে মোটেই চলবে না। দারুচিনি সেবনের আগে ও পরে অবশ্যই আমাদের কে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। আপনি চাইলে সতর্কতার সাথে পরিমাণ মতো দারুচিনি খেতে পারেন। তবে কোনোভাবেই পরিমাণের থেকে বেশি সেবন করা যাবে না।
দারুচিনির খাওয়ার নিয়ম
দারুচিনি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। আপনি চাইলে দারুচিনি সুস্বাদু উপায়ে সেবন করতে পারেন। যেমন, দারুচিনি গুঁড়ো করে খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন। দারুচিনি সাধারনত টস্ট অথবা পেস্ট্রিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
দুধের সাথে দারুচিনি মিশিয়ে একটি অন্যরকম স্বাদের পানি তৈরি করেও খাওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে দারুচিনি পান করলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়।আপনি চাইলে দারুচিনি মধুর সাথে মিশিয়ে ও খেতে পারেন। মধুর সাথে দারুচিনি মিশিয়ে খেলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যায়। দারুচিনিতে গরমের প্রভাব রয়েছে। তাই দারুচিনি হাল্কা গরম পানীতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এর ফলে ঠান্ডা কাশির মত সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এভাবে দারুচিনি খাওয়া ঠিক না কেননা এতে করে কিডনিতে নানান রকম সমস্যা দেখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আরও পড়ুন: মুখে ব্রণ দূর করার উপায়
আরও পড়ুন: চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক
আরও পড়ুন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
আমাদের শেষকথা
এই ব্লগ পোস্ট মাধ্যমে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি খুব ভালো ধারণা অর্জন করেছেন এবং এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসতে পেরেছে।
এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সাথে টেকনোলজি, স্বাস্থ্য টিপস, রুপচর্চা, ভ্রমণ, কম্পিউটার, মোবাইল, টিপস ও ট্রিক্স সম্পর্কিত বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। এবং আমাদের এই ধারা আগামী দিনেও অব্যহত থাকবে। আশা করি এই ব্লগটি আপনাদের পছন্দ হবে।