আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানব অ্যলোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে। অপকারিতা এবং অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কেও। ঘৃতকুমারী যার বৈজ্ঞানিক নাম এবং ইংরেজিতে অ্যালোভেরা কে Medicinal Aloe বা Burn Plant ও বলা হয়ে থাকে। অ্যালোভেরা একটি রসালো জাতীয় উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা গাছ দেখতে অনেকটা ফণীমনসা গাছের মতো। ফণীমনসার মতো দেখতে হলেও এটা ফণীমনসা নয়। অ্যালোভেরা লিলি প্রজাতির গাছ। এর অনেক উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানবো। একইসাথে অ্যালোভেরা ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা গাছের মত দেখতে হলেও এটি কোনো ফণীমনসা গাছ নয়। অ্যালোভেরা এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাচীনকাল থেকেই এই ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে। অ্যালোভেরা বেশ উপকারী একটি উদ্ভিদ। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে অ্যালোভেরার উপকার অনেক। মানবদেহ সুস্থ রাখার জন্য ২২ টি অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন। আর এই ২২ টি অ্যামিনো এসিডের মধ্যে ২০ টি অ্যামিনো এসিড অ্যালোভেরাতে বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়াও এতে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি রয়েছে। অ্যালোভেরা গাছের পাতা অনেক রসালো হয়ে থাকে। এই গাছের পাতার ভেতরে পিচ্ছিল এক ধরনের পদার্থ বা জেল বিদ্যমান। এই জেল বা জেলির অনেক উপকার রয়েছে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক অ্যালোভেরার উপকারিতা, অপকারিতা, ব্যবহার ও ইত্যাদি সম্পর্কে।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহারে নানান রকম উপকারিতা পাওয়া যায়। অ্যালোভেরা পাতায় রয়েছে অনেক ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম, সুগার, ফ্যাটি এসিড সহ নানান উপকারী উপাদান। অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া রূপচর্চা তে ও অ্যালোভেরা বেশ উপকারী। চলুন এখন আমরা অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
অ্যালোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
বলা হয়ে থাকে হার্ট সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই এবং রক্তের কোলেস্ট্রেলের মাত্রা কমিয়ে দিতে অ্যালোভেরা দারুণ কার্যকরী এবং ব্লাড প্রেশার এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা হ্রাস পায়। অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে শরীরের পুষ্টি জনিত অভাব দূর হয়ে যায়। অ্যালোভেরাতে বিদ্যমান ভিটামিন গুলো আমাদের এ ধরনের ঘাটতি পূরণ করে। অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের ফ্যাট নষ্ট করে ঠিকই কিন্তু ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তদের জন্য এটা বেশ উপকারী। একইসাথে ডায়েট এর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম। তাই সবার ঊর্ধ্বে অ্যলোভেরার অবদান বললেই চলে।
অ্যালোভেরার জুস খাওয়ার ফলে, অ্যালোভেরা তে থাকা উপাদান আমাদের শরীরের ক্ষত স্থান গুলো দ্রুত উপশম করে। শরীরের জয়েন্ট বা অন্যান্য স্থানের ব্যথা দূর করতে অ্যালোভেরা জাদুকরী উপাদানের মতো কাজ করে। অ্যালোভেরা খাওয়ার ফলে শরীরের হাড় ও শক্ত হতে থাকে। অ্যালোভেরাতে উপস্থিত ভিটামিন-সি আমাদের মুখের রোগ থেকে বাঁচায়। অ্যালোভেরাতে প্রচুর ভিটামিন থাকার ফলে এটি আমাদের ভিটামিনের অভাব দূর করে। সেই সাথে ভিটামিনের অভাবে নানান ধরণের রোগ হওয়া থেকে বাঁচায়। শুধু তাই নয়, দাঁত কে সুস্থ রাখতেও অ্যালোভেরার ভূমিকা অনেক।
ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা
আপনারা অনেকেই হয়তো ত্বকের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে জেনেছেন। অনেকেই দেখেও থাকবেন ত্বকে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে। অ্যালোভেরা নাইট ক্রিম এর বিপরীতে রাতে ব্যবহারে বেশ উপকার পাওয়া যায়। ন্যাচেরালি অ্যালোভেরা ত্বক ফর্সা করে থাকে। রাতের বেলা অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা ও মসৃণ হতে থাকে। এছাড়া নিয়ম করে অ্যালোভেরা ব্যবহারে ব্রণ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। অ্যালোভেরার একটি বিশেষ গুল হলো যে, এটি নিমিষেই রোদে পোড়া ভাব দূর করতে পারে। এমনকি এটা ত্বকের চামড়ার ভিতর থেকে ময়লা পরিষ্কার করে। অ্যালোভেরা ক্লিনজার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ফেসপ্যাক হিসেবেও অ্যালোভেরা দারুণ কাজ করে। ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বকের ভিতরে থাকা মৃত কোষ গুলো বের করে আনে এবং ত্বক কে আরও মসৃণ ও ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে অ্যালোভেরা।
চুলের জন্য অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা শুধু ত্বকের জন্য নয় বরং চুলের জন্য দারুণ উপকারী। অ্যালোভেরা চুলে ব্যবহারে খুসকি দূর হয় পাশাপাশি চুলের শুষ্ক ভাব, চুল পড়া সমস্যা দূর করতে অনেক সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের অন্যান্য সমস্যা গুলো সমাধান করতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেলের সাথে আমলকী রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
ঠোটের যত্নে অ্যালোভেরা
ঠোঁটের যত্নে অ্যালোভেরার জুড়ি নাই। অ্যালভেরার জেল শুধুমাত্র ঠোঁটে লাগিয়ে রাখলেই ঠোঁটের রঙ গারো হয় সাথে ঠোঁট নরম ও হয়। অ্যালোভেরার জেল শুধুমাত্র ঠোঁটে লাগালেই ঠোঁটের রঙ ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি হয় এবং ঠোঁট নরম হয়। এক চামচ চালের গুঁড়া আর অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে আস্তে আস্তে মিশ্রণ ঠোঁটে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেললেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এভাবে ব্যবহারের পর ঠোঁট হবে উজ্জ্বল, মসৃণ এবং কোমল।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরার রস খেলে রক্তের গ্লুকোজ পরিমাণ কমতে থাকে। তাই অ্যালোভেরার রস খাওয়ার মাধ্যমে আপনারা আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
শরীরের জন্য অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। আগেই বলেছি যে, মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ২২ টি অ্যামিনো এসিডের মধ্যে ২০ টি উপাদান বিদ্যমান অ্যালোভেরা তেই। অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে পাশাপাশি শরীর পরিষ্কারের কাজে সাহায্য করে। শরীরের মাংসপেশি ও জয়েন্ট ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে, দাঁত ও মাড়ি ব্যথা দূর করে, স্তন ক্যান্সার ছড়ানো প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যালোভেরা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। অ্যালোভেরা নিয়মিত ব্যবহারের ফলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
অ্যালোভেরার অপকারিতা
আমরা বরাবর বলে আসছি যে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। অন্যান্য যে কোনো জিনিস যেমন মাত্রাতিরিক্ত বিপদজনক তেমনি অ্যালোভেরা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে ত্বকের নানান রকম ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের কে বিভিন্ন সতর্কতার সাথে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে হবে। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক অ্যালোভেরার অতিরিক্ত ব্যবহার করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে বা অ্যালোভেরার অপকারিতা সম্পর্কে কি কি জানা প্রয়োজন আমাদের।
১। অতিরিক্ত অ্যালোভেরা ব্যবহারের ফলে এলার্জি জনিত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা আছে তারা অ্যালোভেরা এড়িয়ে চললেই ভালো করবেন।
২। মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকের আংশিক অংশ লালচে বা পুড়ে যেতে পারে। তাই ক্ষত স্থানে বা ত্বকের ক্ষেত্রে একদম বেশি বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
৩। অ্যালোভেরার অতিরিক্ত ব্যবহার ডায়রিয়া ডেকে আনতে পারে।
৪। অ্যালোভেরার অতিরিক্ত ব্যবহার এর কারণে প্রস্রাবের রঙ লালচে ধরনের আকার ধারণ করতে পারে।
৫। গর্ভবতী মহিলা বা যারা এখনো শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের কে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা অ্যালোভেরা জরায়ু সংকোচন করে এবং বাচ্চাদের গ্যাস্ত্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা বা টয়লেটে সমস্যা হতে পারে।
অ্যালভেরার জুস খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে সেটা জেনো কোনো ভাবে মাত্রাতিরিক্ত না হয়। কেননা অতিরিক্ত সেবনের ফলে সমস্যা হতে পারে। পরিশেষে বলা যেতেই পারে যে অ্যালোভেরা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। রূপচর্চার জন্য বিশেষ করে অ্যালোভেরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
আরও পড়ুন: মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আরও পড়ুন: দারুচিনির উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের শেষকথা
অ্যালোভেরার অপকারিতার চাইতে অ্যালোভেরার উপকারিতা অনেক বেশি এছাড়া অ্যালোভেরা সঠিক ভাবে গ্রহণ করলে অপকারিতা নেই বললেই হয়। অ্যালোভেরা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ। প্রাচীনকালে অ্যালোভেরা দিয়ে নানান ধরনের রোগের ঔষধ বানানো হতো। আপনি চাইলে নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।
এই ব্লগের মাধ্যমে আমরা রূপচর্চা, ভ্রমণ, টেকনোলোজি, কম্পিউটার, মোবাইল, রিভিউ, টিপস সংক্রান্ত নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিশ করে যাচ্ছি এবং আমাদের এই ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। আশা করি এই ব্লগটি আপনাদের পছন্দ হবে।